সোমবার (৭ অক্টোবর) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব শিশু দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা ও অনুদান দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব নাজমা মোবারক। এবারের শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিটি শিশুর অধিকার রক্ষা আমাদের অঙ্গীকার। ’
এ সময় শহীদ পরিবারের সদস্যরা জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত, আহত সবার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার চাই। আন্দোলনে শহীদ শিশুদের বীর শহীদদের মর্যাদা দেওয়া, তাদের নামে নানা স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে সুযোগ দিতে হবে।
মঞ্চে মমতা ও ফাহিম নামে দুজন শিশু প্রতিনিধি বলেন, তাদের স্কুলগুলোতে খেলার মাঠ, গ্রন্থাগার প্রয়োজন। বেড়ে ওঠার সুন্দর পরিবেশ প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। উপস্থিত ছিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরাও। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হওয়া শিশুদের উদ্দেশে নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সঙ্গে আমি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মিল রয়েছে। ৭১ সালে মা তার সন্তানদের যুদ্ধে পাঠিয়েছে ২৪ শের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের আন্দোলনে পাঠিয়েছে। এতে যেই পুলিশের সন্তান মারা গেলে তাকেও কারো নির্দেশে কোমলমতি শিশুদের ওপর গুলি করতে হয়েছে। তখন সে তার স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিল একটা বাচ্চা মারতে কয়টা গুলি লাগে? এরা কারা, ৭১ সালে আমরা জানতাম কারা আমাদের শত্রু। কিন্তু ২০২৪ সালে যেটা ঘটেছে সেখানে সবকিছু একাকার হয়ে গেছে। আমাদের শত্রুকে।
আমরা কী করে এ প্রজন্মের যোগ্য করবো- এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমরা কোনো কাজ করলে এ প্রজন্মের সম্মান ফিরে পাবো। এখন আমাদের পাতা উল্টে ফেলার সময় হয়েছে। গত ৫০ বছরে আমরা যত ভুল, চুরি, ডাকাতি করে দেশটাকে নিঃস্ব করেছি, অর্থ পাচার করে একটা নিঃস্ব দেশ ফেলে পালিয়েছি। এ সময়টাকে ভোলা যাবে না। কারণ আমরা চাই না, পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের দিকে আঙুল তুলক। আমরা আবার শূন্য থেকে শুরু করবো। নতুন প্রজন্ম নিজেদের মতো করে ভালোবাসা, মেধা মনন দিয়ে দেশ গড়ে তুলবে। কারণ তারা ন্যায়, অন্যায়কে গভীরভাবে ধারণ করে। আমাদের প্রজন্ম তোমাদের চোখ দিয়ে নতুন করে দেখতে শিখবে। এ প্রজন্মের হাত দিয়েই গড়ে উঠবে গণতন্ত্রের সুন্দর জায়গা। আমরা সেই স্বপ্নের নিরাপদ আশ্রয়স্থল করে গড়ে তোলা হবে।
তোমরা আমাদের শেকড় থেকে নাড়া দিয়েছ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশটাকে নতুন করে গড়তে হবে। আমরা নিশ্চিতভাবে মুক্তির এক ধাপ এগোলাম। আমরা যারা সামাজিক আন্দোলন করি, ক্যাম্পেইন করি এর কোনো কিছু এ আন্দোলনের সমতুল্য হতে পারবে না। এ একটি মাসে আমাদের মূল্যবোধের যে জায়গাটায় নাড়া পড়েছে, সেটা হাজার কোটি টাকার সামাজিক আন্দোলন বা ক্যাম্পেইন দিয়ে সম্ভব হতো না। আমরা যতোই বলি না কে তোমাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা কম হয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে শিশুদের জন্য সুন্দর একটা দেশ গড়ে তুলি।
নাজমা মোবারক বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত, নিহত সব শিশুদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। এ বছর আমাদের শিশু দিবস উৎসর্গ করা হয়েছে জুলাই আন্দোলনে শাহাদাৎবরণকারী সব শিশুদের। আজকে আমরা বিশ্বের শিশুদের অধিকার আদায়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কাজ করার জন্য। প্রতিবছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার এ দিবস উদযাপন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, শিশুরা সূচিতার মূর্তপ্রতীক, সুপ্ত প্রাণ। ধরার বুকে নিয়ে আসে নন্দনের সংবাদ। শিশুরাই আগামী দিনের স্বপ্ন, অনাগত দিনের নতুন ইতিহাস। দেশের ভবিষ্যৎ এ শিশুদের হাতেই। এজন্য শিশুদের যত্ন, অধিকার, নিরাপত্তা, ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা শিশু নীতি করেছি, আইন করেছি। আমরা চাই প্রতিটা শিশু নিরাপদে বেড়ে উঠবে। সে লক্ষ্যে শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শিশুদের উন্নয়নে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ হবে সুনিশ্চিত।